নিউজ ডেস্ক : দেশজুড়ে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবী জানানোর বিশেষ কর্মসূচি পরিপূর্ণভাবে পালন করতে ব্যার্থ হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপস্তিতিতে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই সংক্ষিপ্তভাবে উক্ত কর্মসূচী সমাপ্ত করতে হয়েছে তাদের।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে উভয়পক্ষ অবস্থান নিলে প্রথমে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিলেও পরবর্তীতে কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এসময় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাও কোটা সংস্কারের পক্ষে। তবে জামায়াত-বিএনপি উক্ত আন্দোলনকে ইস্যু করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আস্তে আস্তে বেলা তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবী জানানোর বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে প্রেসক্লাবের সামনে তাদের অবস্থান কর্মসূচী, প্রচারপত্র বিতরণ ও আলোচনাসভা করার কথা ছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও এসময় জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভন, এবং সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সুজন দত্ত সহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জটলা বাড়তে থাকে। অতঃপর প্রেসক্লাবের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট আলোচনা হয়। কোটার যৌক্তিক সংস্কার দাবির কর্মসূচী পালনকে কেন্দ্র করে কোনো অঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর দায় ভার কে নিবে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের জানানো হয়। ছাত্রলীগের এই তৎপরতা ও বাধার মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা কর্মসূচী থেকে পিছু হাঁটেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতেই 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই,' সহ কয়েকটি স্লোগান দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্যরা।
সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী সানিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সরকারের যে কোটা আছে আমরা সেটির যৌক্তিক সংস্কার চাই। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে।আমাদের আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চাইছে। কিন্তু সারা বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে অন্যায়ভাবে অত্যাচার ও নিপীড়ন করা হচ্ছে। আমরা এই অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হােক। আমরা থাকব পড়ার টেবিলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু আমাদের থাকতে হচ্ছে রাজপথে। সরকারের কাছে দাবি চলমান সমস্যার সমাধান হোক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যেন কোনো হামলা না হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহারসহ হামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তারা। সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যেন কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার না হন।’
![]() |
আমরাও চাই কোটার যৌক্তিক সংস্কার হোক : শাহাদাৎ হোসেন শোভন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান) · ছবি: সংগ্রহীত |
এসময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন শোভন বলেন, ‘আমরাও চাই কোটার যৌক্তিক সংস্কার হোক। কিন্তু চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। জামায়াতসহ বিএনপির লোকজন কোটার আন্দোলনকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেছে। তারা বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে যারা কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে এসেছেন তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। সুন্দরভাবে কর্মসূচী পালন করতে পারলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই বলে তাদের জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে যে জেলা ছাত্রদল, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের কর্মসূচীর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে এবং একটি নির্দিষ্টস্থানে জড়ো হয়ে বিশঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করবে।’
টিবি/জেলা প্রতিনিধি/ব্রাহ্মণবাড়িয়া/তিতাস টাইমস২৪
0 মন্তব্যসমূহ