ইয়াবা সেবন করে আশ্রিতদের পেটাতেন মিল্টন সমাদ্দার

নিউজ ডেস্ক : বিতর্কিত সমাজকর্মী ও ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার ইয়াবা সেবন করে টর্চার সেলে শিশু ও বৃদ্ধদের পেটাতেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সোমবার (৬ মে) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই তথ্য জানান।

এনিয়ে ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দার ইয়াবা সেবন করেন বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। তার টর্চার সেলে অত্যাচারের মাত্রা ছিল অমানবিক। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ছাড়া শিশু ও বৃদ্ধদের এভাবে কেউ পেটাতে পারে না। তার পেটানোর চিত্র এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এসময় তিনি বলেন, বিভিন্ন মানুষকে প্রতারিত করে বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের পুঁজি করে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা কামাচ্ছিলেন মিল্টন। এই টাকা মিল্টনের অ্যাকাউন্টে জমা হলেও অসহায় মানুষের জন্য তিনি খরচ করেননি। তিনি হাসপাতালে না নিয়ে নিজেই চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সিল নকল করে জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার বিষয়টি ধীরে ধীরে স্বীকার করতে শুরু করেছেন তিনি।

এই প্রসঙ্গে ডিবিপ্রধান আরো বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে থাকা বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি যারা আছেন তাদের আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে। আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের কর্ণধার রোববার ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাকে অনুরোধ করা হয়েছে মিল্টনের আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসা সেবা দিতে। এছাড়া সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকবেন যিনি চিকিৎসা সেবা দেবেন। এতে যা খরচ হবে সেই খরচ আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে ব্যয় করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সিল নকল করে জাল মৃত্যু সনদ দেওয়ার বিষয়টি ধীরে ধীরে স্বীকার করা শুরু করেছেন মিল্টন। তার বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ উঠেছে, সব অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

উল্লেখ্য, গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। গত বৃহস্পতিবার (২ মে) মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রবিবার আরেক মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

এদিকে মিল্টন সমাদ্দারের গ্রেফতার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন মিরপুরের পাইকপাড়া এবং বরিশালের উজিরপুরের সাধারণ মানুষ। এছাড়া বুধবার রাতেই রাজধানীতে আনন্দ মিছিল করেন স্থানীয়রা। গ্রেফতারের পর থেকেই ভুক্তভোগীদের অনেকে মিল্টনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের। অভিযোগ রয়েছে, এই বিশাল অনুসারীদের কাজে লাগিয়ে তার মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন মানবিক কাজ প্রচার করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা।

এসএনআর/ঢাকা/নিউজ ডেস্ক/তিতাস টাইমস২৪