আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দোল্লাহিয়ান এবং অন্যান্য কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। উক্ত হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার সফর সঙ্গীদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে দেশটির সর্বস্তরের জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছেন। তবে দুর্ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও দুর্ঘটনা কবলিত হেলিকপ্টারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
রোববার (১৯ মে) ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার খবরে বলা হয়, ৬৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজান সীমান্তের কাছে ইরানের একটি জলাধার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন। পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ভার্জাকন এলাকায় জরুরি অবতরণ করার সময় তাঁর হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভার্জাকন এবং জোলফা শহরের মধ্যে ডিজমার জঙ্গলে। হেলিকপ্টারে আরও ছিলেন পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং সেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেম। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাইসি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ভাহিদি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, কুয়াশাপূর্ণ আবহাওয়া ও ঘটনাস্থল দুর্গম এলাকা হওয়ায় উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টারের সঙ্গে আরও দুটি হেলিকপ্টার ছিল। এগুলো গন্তব্যে পৌঁছেছে। প্রেস টিভি জানায়, দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা পরই উদ্ধারকারীরা ওই এলাকায় গিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। উদ্ধার কাজে একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হলেও তা অবতরণ করতে পারেনি। সেটি ফেরত আসে। পরে অবশ্য মন্ত্রীদের নিয়ে দুটি হেলিকপ্টার সেখানে অবতরণ করে।
রাতের অন্ধকার নেমে আসায় এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমানে উদ্ধার তৎপরতা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ইমার্জেন্সি সার্ভিস। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি সব নিয়মিত অনুষ্ঠান বন্ধ করে সারাদেশে রাইসির জন্য প্রার্থনা দেখাচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদদাতাদের দেয়া তথ্যমতে, দুর্ঘটনাস্থলটি একটি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে উদ্ধারকারী দলকে উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট পীর হোসেইন কলিভান্দ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ছয়টি প্রদেশ থেকে ৪০টি উদ্ধারকারী দল অনুসন্ধান অভিযানে অংশ নিয়েছে।
এনিয়ে ইরানের জরুরী সেবা বিভাগ জানিয়েছে, ওই এলাকায় আটটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। তবে তীব্র কুয়াশায় উদ্ধারকাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি চিকিৎসক দলও পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি দুর্ঘটনার কবলে পড়া হেলিকপ্টারটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, খবর আলজাজিরার। তবে ইব্রাহিম রাইসি ও তার সফরসঙ্গীরা জীবিত আছেন কীনা, বা তাদের বর্তমান পরিস্থিতি কী, সেই সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কেউ নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য জনাতে পারেননি।
অন্যদিকে, হেলিকপ্টারটির উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ইরানের রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যম বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার খুঁজে পাওয়া গেছে বলে ‘অসমর্থিত’ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এনিয়ে জ্বালানিমন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ানের বরাতে দেশটির রাষ্ট্রয়াত্ত টেলিভিশনের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, হেলিকপ্টার খুঁজে পাওয়ার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে হেলিকপ্টারটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন একটি এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে তল্লাশি ও উদ্ধারকারী দল রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে পূর্ব আজারবাইজানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার আসগর আব্বাসঘোলিজাদেহ বলেন, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার থেকে এক ফ্লাইট ক্রুর মোবাইল ফোনের সংকেত শনাক্ত করেছে সশস্ত্র বাহিনী। আমরা এখন ওই এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আশা করি, জনগণকে সুসংবাদ দিতে পারব।
উক্ত দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চার ‘ফেলো আসলানি’ বলেন, ‘যত সময় যাচ্ছে, আশা কমছে কারণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে এবং অন্ধকার হয়ে আসছে। এখানে তেহরানে (ইরানের রাজধানী) যা অনুভূত হচ্ছে তা বেশিরভাগই অনিশ্চয়তার অনুভূতি।’
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব অধ্যয়নের অধ্যাপক ফুয়াদ ইজাদির মতে, ‘দলগুলো হেলিকপ্টারে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। হতে পারে দুর্ঘটনাটি খুব খারাপ ছিল। অথবা এলাকাটিতে নেটওয়ার্ক নাও থাকতে পারে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে।’
উল্লেখ্য, ইরানের বিমান দুর্ঘটনার ভয়ংকর রেকর্ড রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, দেশটি বিমানের পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে পারে না। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই সময় থেকে বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় ২০০০ ইরানি প্রাণ হারিয়েছেন।
এফএ/ডেস্ক রিপোর্ট/তিতাস টাইমস২৪







0 মন্তব্যসমূহ