সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন

নিউজ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী 'পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী' হতে চলেছেন। এর মধ্যদিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন। ইতিপূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর কখনো একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পায়নি। অবশেষে এবার সেই শূন্যস্থান পূরণ হতে যাচ্ছে। 


বুধবার (১০ জানুয়ারি) গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ফোন করে শপথ নিতে বলা হয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বঙ্গভবনে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ রাষ্ট্রপতি সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পাঠ করাবেন। অতঃপর মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ পাঠ করাবেন তিনি। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানা যায়।  


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরপর (৯ জানুয়ারী) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জননেতা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে এবং তাকে অর্থ মন্ত্রণালয় অথবা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে একটি বিশেষ সূত্র জানায়।  



যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. আবদুর রউফ চৌধুরী, মাতা মোসাম্মৎ হালিমা খাতুন চৌধুরী। ঢাকা মাদরাসা-ই-আলীয়া থেকে তিনি ফাজিল পাস করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম সাধারণ সম্পাদক তিনি। ১৯৭০ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী মুজিববাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে এক পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল যখন, দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান ছিলো তখন। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান ও ৪ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে তাকে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ২ বছর কারাবন্দী থাকতে হয়। এরপর ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান তিনি। 

১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রশাসনিক ক্যাডার হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অফিসারদের নিয়ে গঠিত জনতার মঞ্চের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু মৃত্যুবরণ করলে এই আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার, এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি নবম জাতীয় সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিশাল ভোটের ব্যবধানে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। উক্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। একেবারে শেষমুহুর্তে এসে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও (সদ্য পদত্যাগী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান) ফেইসবুক লাইভে এসে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। কাঁচি প্রতীকে উক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ৬৪ হাজার ০৩৭ ভোট। 



এদিকে, মন্ত্রিসভায় র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ মিছিল করেছেন জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।


অন্যদিকে, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে ডাক পেয়েছেন ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও চলমান মন্ত্রিসভার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।


মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, নতুন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। যারা মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে টেলিফোনে জানানো হচ্ছে।


সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য হিসেবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি প্রাদান করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে প্রজ্ঞাপন। যেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।

উক্ত প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে।


Main Ad

এসএনআর/তিতাস টাইমস২৪

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

© TitasTimes24 All Rights Reserved

class='remove-footer'>