নিজিস্ব প্রতিবেদক: যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর গুলিতে যশোর-৪৯ বিজিবির সিপাহী রইস উদ্দীন নিহত হয়েছেন। গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে বেনাপোল সীমান্তের ধান্যখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৩৩ মিনিটে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রইস উদ্দীনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন।
উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার ভোররাত আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবির টহল দল ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট এলাকায় ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে একদল গরু চোরাকারবারিদের আসতে দেখে। বিজিবি সদস্যরা চ্যালেঞ্জ করলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইস উদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করেন এবং ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফ এর গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই এই বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রইস উদ্দীন এর মৃত্যু হয়েছে।
তবে এই বিষয়ে বিএসএফকে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে। আর দ্রুততম সময়ে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে বেনাপোল সীমান্ত থেকে বেশ কয়েকটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভোরে চোরাকারবারিরা গরু আনতে ছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরকারবারিদের ধাওয়া করে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে। এসময় বিজিবি সদস্য সিপাহী রইশুদ্দীন বিএসএফ সদস্যদের দেখে সামনে এগিয়ে যান। ঘটনার সময় রইস উদ্দীন সাদা পোশাকে ছিলেন। রইস উদ্দীন বিএসএসফ সদস্যদের কাছে নিজেকে বিজিবি সদস্য পরিচয় দেন এবং ঘটনার ব্যাপারে জানতে চান। পরিচয় পাওয়ার পরও বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে আহত করেন। বিএসএফ এর করা গুলি পেটে বিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। পরে তার মরদেহ বিএসএফ সদস্যরা ভারত সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যায়।
এই প্রসঙ্গে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোমবার ভোরে অন্তত ৮/৯ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছেন তারা। বিজিবি ক্যাম্পে পাচার হওয়া দুটি গরুকেও আটক রাখা হয়েছে। সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে স্থানীয়দের দাবী। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিজিবির দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিওয়ন কমান্ডার ও যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জামিল।
নিহত সিপাহি মোহাম্মদ রইস উদ্দীনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নে। তার বাবার নাম কামরুজ্জামান। ২০১৫ সালের জুনে রইস উদ্দীন বিজিবি সিপাহি পদে যোগদান করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্তরক্ষায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। বর্তমানে কর্মরত ছিলেন যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপিতে।
রইস উদ্দীনের ভাই ও বিজিবি সদস্য মাসুম রেজা বাবু বলেন, আমি সোমবার রাতে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ৪৯ ব্যাটালিয়নে অবস্থান করছি। কখন মরদেহ বুঝে পাব, তারও নিশ্চয়তা নেই। শুনেছি বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত কী, সেটিও জানতে পারিনি। সময় তিনি আরো বলেন, আমরা পাঁচ ভাই-বোন। এর মধ্যে আমি আর রইশুদ্দীন বিজিবিতে ও বড় ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। রইশুদ্দীনের চার বছরের মেয়ে রাফিয়া ও পাঁচ মাসের ছেলে সন্তান রয়েছে।
এদিকে যশোরের বেনাপোল ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে বিজিবি সদস্য রইস উদ্দীন নিহত হবার ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ২ বছর বয়সী শিশু রাইশা খাতুন ও ৪ মাস বয়সী হাসান আলী কে নিয়ে লাশের অপেক্ষায় নির্বাক স্ত্রী নাসরিন খাতুন। পাশে বসে অঝোড়ে কাঁদছেন নিহত রইসউদ্দীনের মা রহিমা বেগম। ছেলের বউয়ের পাশে বসে নাতনীকে কোলে নিয়ে শাশুড়ি রহিমা বেগম তো অঝোরে কাঁদছেন। আর বলছেন, কেন তার ছোট সন্তানকে পাখির মত গুলি করা হলো? সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়েই কি অন্যায় করেছে তার সন্তান? এ সময় তিনি তার সন্তানের লাশ দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন সরকারের কাছে।
উল্লেখ্য, বেনাপোলের ধান্যখোলা জেলেপাড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের মরদেহ এখনও ফেরত দেয়নি ভারত কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ মর্গে রয়েছে মরদেহটি। ওপারের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বুধবার (২৪ জানুয়ারী) তার মরদেহ বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
এজি/নিজস্ব প্রতিনিধি/চাঁপাইনবাবগঞ্জ/তিতাস টাইমস২৪







0 মন্তব্যসমূহ